লিখিত আদেশ ছাড়াই রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়েছে বিদেশস্থ কূটনৈতিক মিশনগুলো। “জিরো পোর্ট্রেট নীতি”র এই সিদ্ধান্ত কি সংকেত নাকি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন?
_মুক্তিবার্তা৭১
বাংলাদেশের বিদেশস্থ কূটনৈতিক মিশনগুলোতে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর বিষয়ে কোনো লিখিত আদেশ জারি না হলেও, বেশিরভাগ মিশন কয়েক মাস ধরে “জিরো পোর্ট্রেট নীতি” অনুসরণ করছে। অর্থাৎ—কোনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কারও ছবি রাখা হচ্ছে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না থাকলেও একটি অঘোষিত সংকেত অনুসরণ করা হয়েছে।
বিদেশে অবস্থানরত এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ইউএনবিকে বলেন, “দেশ থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে সংকেতটা স্পষ্ট ছিল।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বিদেশ যাত্রার পর মন্ত্রণালয়ের সভাগুলোতে লক্ষ্য করা যায়, অফিসে কোনো ছবি রাখা হয়নি। এটি ছিল এক ধরনের বার্তা—যা পরে মিশনগুলোও অনুসরণ করে।
প্রশ্ন উঠছে, কেনো এমন সিদ্ধান্ত? বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে—
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা: ৫ আগস্ট পরবর্তী ক্ষমতার অনিশ্চয়তায় প্রশাসন কোনো পক্ষের প্রতীক ধরে রাখতে চায়নি।
২. কূটনৈতিক নিরপেক্ষতা: বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় “জিরো পোর্ট্রেট নীতি” এক প্রকার নিরাপদ অবস্থান।
৩. অঘোষিত নির্দেশনা: লিখিত না হলেও মন্ত্রণালয়ের ভেতরকার সংকেত মিশনগুলোকে বাধ্য করেছে।
এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক অবস্থান থাকলেও তাঁর প্রতিকৃতি সরানো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক অস্থিরতাকেই স্পষ্ট করছে।
অনেকে এটিকে কেবল প্রশাসনিক সংকেত নয়, বরং “রাষ্ট্রীয় অনিশ্চয়তার প্রতীক” বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সংক্ষেপে শুধু বলেন, “হ্যাঁ।”
বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন নজিরবিহীন পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। সরকারি প্রতীক ও প্রতিকৃতির অনুপস্থিতি আসলে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিচ্ছে—রাষ্ট্র আজও চূড়ান্ত নেতৃত্বের সংকটে রয়েছে।
