১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনে মানুষের শোক প্রকাশ বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো ইউনূস সরকার। পুলিশি দমননীতি, খিচুড়ি লুট ও “জয় বাংলা” নিষিদ্ধ করার মতো কালচারাল ফ্যাসিবাদ ইতিহাস মুছতে পারবে না।
১৫ আগস্ট—এই দিনটি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে শুধু একটি কালো দিবস নয়, বরং জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য সত্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল এই দিনে, আর সেই হত্যাকাণ্ড ছিল মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পুনরুত্থানের ঘোষণাপত্র। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ২০২৫ সালের এই শোক দিবসও বাংলাদেশ দেখল নতুন এক কৌশলী অপমান।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ১৫ আগস্টকে দমন করার দিন বানিয়েছে।
মানুষের ব্যক্তিগত শোক প্রকাশের পথকেও তারা রুদ্ধ করেছে পুলিশি পাহারা ও মব দিয়ে।
অথচ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—
রাষ্ট্রপ্রধান বা দলীয় সিদ্ধান্ত দিয়ে শোক, ভালোবাসা কিংবা শ্রদ্ধার অনুভূতি বন্ধ করা যায় না।
ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তে মানুষ যখন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এগিয়ে এসেছে, তখন তাদের সামনে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় শক্তি।
পুলিশের দ্বারা লাঠিপেটা, বাধা, এমনকি গরিব মানুষের জন্য রান্না করা খিচুড়ি লুট করার মতো নোংরা দৃশ্যও ঘটেছে।
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাতার জন্য শোকভোজ লুট করা—এ কেবল রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব নয়, সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্বেরও চরম উদাহরণ।
এই সরকারের চরিত্র ‘কালচারাল ফ্যাসিবাদ’-এর প্রতীক।
তারা ভেবেছিল, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে বঙ্গবন্ধুর নামও জনগণের হৃদয় থেকে মুছে যাবে।
অথচ বাস্তবতা উল্টো।
মানুষ বারবার প্রমাণ করছে—
বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দলের নন, তিনি বাংলাদেশের আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।
এখানে কোনো সংগঠিত প্রচারণা লাগে না।
আওয়ামী লীগ না থাকলেও, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার মুছে যাবে না।
কারণ এই ইতিহাস মানুষের রক্তে মিশে গেছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন মঞ্চে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করার যে প্রয়াস চালাচ্ছেন, তা সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই গ্রহণ করছে না।
তাদের কথিত ন্যারেটিভ যতই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হোক না কেন, বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অপমান সহ্য করবে না।
ইউনূস সরকার “জয় বাংলা” স্লোগান নিষিদ্ধ করেছে।
ভেবেছে, এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে।
কিন্তু “জয় বাংলা” এখন আর কেবল আওয়ামী লীগের ব্যানার নয়—এটি আবার জনগণের স্লোগান হয়ে ফিরে এসেছে।
প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার আর বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধার ভাষা হিসেবেই “জয় বাংলা” নতুন করে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
১৫ আগস্ট ২০২৫ দেখিয়ে দিল—রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়ন, পুলিশি দমননীতি কিংবা কালচারাল ফ্যাসিবাদ দিয়ে মানুষের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না।
যারা মনে করছে, দমন-পীড়ন ও ভিন্নমত দমন করেই ইতিহাসের স্রোত ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে, তারা ভয়াবহ ভ্রান্তির মধ্যে আছে।
বাংলাদেশের মানুষের চেতনা মুক্তিযুদ্ধ থেকে জন্মেছে, বঙ্গবন্ধুর রক্তে সিক্ত হয়ে তা আজও প্রবাহিত হচ্ছে।
তাই যতই বাধা আসুক, শোক দিবসের মিছিল, খিচুড়ির হাঁড়ি, কিংবা “জয় বাংলা” স্লোগান—সবই প্রমাণ করে, জাতির পিতা এখনো জনগণের সবচেয়ে শক্তিশালী ঐক্যের প্রতীক।
