ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংস হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর প্রাপ্ত পবিত্র কোরআন শরীফও। আনোয়ার সাদাতের উপহার এই কোরআন শরীফ পোড়ানো প্রমাণ করে—বাংলাদেশবিরোধীরা শুধু রাজনীতিই নয়, ধর্ম ও ইতিহাসকেও আঘাত করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাঁর বাসভবন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর আজ স্বাধীনতার ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। অথচ সেই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে যখন বাংলাদেশবিরোধী শক্তি অগ্নিদগ্ধ করলো, তখন ধ্বংসের শিকার হলো কেবল ইট-পাথর নয়, বরং আঘাত হানা হলো আমাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতীকেও। এবার প্রকাশ্যে এসেছে এক মর্মান্তিক তথ্য—সেই আগুন থেকে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর প্রাপ্ত একটি পবিত্র কোরআন শরীফও।
এই কোরআন শরীফ ছিলো মিশরের সাবেক রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাতের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া বিশেষ উপহার।
এটি শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব ও ঐক্যের প্রতীক ছিল।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনের পাঠকক্ষে তা সংরক্ষিত ছিল, যেন জাতির মানুষ দেখে বুঝতে পারে—বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও আরব বিশ্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল।
আগুনে যখন বঙ্গবন্ধু ভবন জ্বলছিল, তখন শুধু বঙ্গবন্ধুর স্মারক বা পরিবার-সংক্রান্ত দলিলপত্রই পুড়ছিল না, বরং আমাদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনের প্রতীকও ধ্বংস হচ্ছিল।
এটি ছিল স্পষ্ট বার্তা—বাংলাদেশবিরোধী শক্তি শুধু রাজনৈতিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করেনি, বরং ধর্ম, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপরও আঘাত হেনেছিল।
এই ঘটনায় স্পষ্ট হলো, যারা নিজেদের “ধর্মরক্ষক” দাবি করে, তারাই আসলে পবিত্র কোরআন শরীফের মর্যাদা নষ্ট করেছে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জোটের ভণ্ডামি উন্মোচন করে।
ধর্মীয় গ্রন্থকে আঘাত করা মানে একটি জাতির আত্মাকে আঘাত করা।
ধানমন্ডি ৩২-এর অগ্নিকাণ্ড তাই কেবল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নয়, এটি ছিলো বাংলাদেশের জাতিসত্তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন ইসলামী মানবতার প্রতিনিধি, যিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
তাই তাঁর স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত কোরআন শরীফ পুড়িয়ে ফেলা আসলে বাংলাদেশের মুসলিম পরিচয়কে অস্বীকার করার সমান।
আজ যখন বাংলাদেশ আবারও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি, তখন এই ঘটনার তাৎপর্য আরও গভীর।
ইতিহাস আমাদের শেখায়—বাংলাদেশবিরোধী শক্তি কখনও দেশের ধর্মীয় আবেগকে শ্রদ্ধা করেনি, বরং নিজেদের স্বার্থে তা ব্যবহার করেছে।
ধানমন্ডি ৩২-এ পবিত্র কোরআন শরীফের ধ্বংস প্রমাণ করে, তাদের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই মুছে ফেলা।
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পবিত্র কোরআন শরীফের ধ্বংস তাই আমাদের জন্য কেবল একটি দুঃখজনক স্মৃতি নয়, বরং একটি সতর্কবার্তা।
যারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়, তারা কখনো ধর্মকেও রক্ষা করে না।
আজকের প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানতে হবে, যাতে আবারও কোনো শক্তি ধর্মকে আড়াল করে দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করতে না পারে।
