খাগড়াছড়ির রামগড়ে মা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনা শুধু হত্যাকাণ্ড নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। পাহাড়ি জনপদে আইনশৃঙ্খলা সংকট, নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা ও বিচারহীনতার বিশ্লেষণ।
খাগড়াছড়ির রামগড়ের পূর্ব বাগানটিলা এলাকায় ৯২ বছরের এক বৃদ্ধা আমেনা বেগম ও তার মেয়ে রায়হানা আক্তারের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের খবর আমাদের সমাজের ভেতরকার ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে, আগের রাতেই মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
এমন ঘটনা বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপদে নতুন নয়।
তবে প্রতিবারের মতো এবারও প্রশ্ন থেকে যায়—রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে?
হত্যার শিকাররা সাধারণ পরিবার থেকে এলেও, এর প্রতিক্রিয়া গোটা সমাজকে নাড়া দিয়েছে।
কারণ ঘরের ভেতর, নিজেদের পরিচিত আবাসে নিরাপদ থাকার যে বিশ্বাস মানুষ করে, এই হত্যাকাণ্ড সেই বিশ্বাসের ভিতই ভেঙে দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতা একটি অদৃশ্য ছায়ার মতো বিরাজ করছে।
ভূমি বিরোধ, রাজনৈতিক আধিপত্য, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাব—সবকিছু মিলে সাধারণ মানুষ প্রায়ই হয়ে ওঠে টার্গেট।
কিন্তু স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, প্রতিবার ঘটনার পর পুলিশ ‘তদন্ত চলছে’ বলে দায়সারা বক্তব্য দিলেও অপরাধীদের অধিকাংশই থেকে যায় আইনের বাইরে।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
কিন্তু যখন একজন ৯২ বছরের নারী পর্যন্ত হত্যাকারীর হাত থেকে রেহাই পান না, তখন তা স্পষ্ট করে দেয় যে সহিংসতা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বয়স বা লিঙ্গের বিরুদ্ধে নয়—এটি গোটা সমাজের প্রতি এক অমানবিক হুমকি।
প্রশ্ন উঠছে—
একই ধাঁচের হত্যাকাণ্ড যখন বারবার ঘটে, তখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতা কোথায়?
তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের দমনের বদলে উল্টো উৎসাহিত করছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে—‘অপরাধী যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত শাস্তি এড়িয়েই বেরিয়ে যাবে’।
শুধু পুলিশি তদন্ত নয়, প্রয়োজন সমন্বিত সামাজিক প্রতিরোধ।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নাগরিক সমাজকে একসাথে কাজ করতে হবে।
পাহাড়ি অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ কৌশল ও স্থায়ী নজরদারি অপরিহার্য।
একইসাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও কঠোরভাবে কাজ করতে হবে যাতে অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
রামগড়ের মা-মেয়ের হত্যাকাণ্ড আমাদের সামনে কেবল একটি অপরাধ চিত্র নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার এক ভয়াবহ বার্তা।
যদি এই ঘটনার যথাযথ বিচার নিশ্চিত না হয়, তবে পাহাড়ের মানুষসহ সারা দেশের সাধারণ নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতার গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
