কুমিল্লায় মাদ্রাসা শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনা শিশু সুরক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াবহ বাস্তবতা সামনে এনেছে। সমাজের নীরবতা ও আইনি দুর্বলতার বিশ্লেষণ।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কংশনগর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল হিফজ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠাতা মো. ইব্রাহিম খলিলের (৩০) বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে জনরোষের পর আটক হয়ে কারাগারে যাওয়ার ঘটনা আবারও আলোচনায় এনেছে মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের বিষয়টি।
২৫ আগস্ট রাতে শিক্ষার্থীদের ঘুমের সুযোগে নিজের অফিস কক্ষে দুই ছাত্রকে ডেকে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
পরে ভুক্তভোগী পরিবার বিষয়টি প্রকাশ করলে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে গণধোলাই দিয়ে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
অভিযোগের গুরুত্ব আরও বাড়ে যখন জানা যায়,
এর আগেও ইব্রাহিম খলিল নিজের চাচাতো বোনকে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন এবং সে মামলায় বর্তমানে জামিনে ছিলেন।
একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও তার অব্যাহত প্রভাব বিস্তার সমাজের কাঠামোগত দুর্বলতাকেই তুলে ধরে।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেবল ব্যক্তিগত বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ নয়, বরং একটি ব্যর্থ সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারির চিত্র।
একজন শিক্ষক—যার ওপর শিক্ষার্থীদের মানসিক, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব অর্পিত—যদি বারবার ধর্ষণ ও বলাৎকারের মতো অপরাধে জড়িত হন, তবে সেটি একটি ভয়াবহ সংকেত।
প্রশ্ন জাগে—
কেন তিনি জামিনে থেকেও অবাধে শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে পারলেন?
পরিবার ও অভিভাবকরা কেন আগেই সতর্ক হননি?
স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাও এখানে বড় দায় বহন করে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হলেও এর বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল।
এর সুযোগ নিয়ে অনেক অপরাধী জামিনে থেকে আবারও একই অপরাধে লিপ্ত হয়।
ফলে শিশু সুরক্ষার আইনি কাঠামো থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না।
শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মাদ্রাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
জামিনে মুক্তি পাওয়া যৌন অপরাধীদের ওপর বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা থাকা উচিত।
পরিবার ও সমাজকে নীরব না থেকে প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে হবে, কারণ নীরবতা অপরাধীকে সাহসী করে তোলে।
ইব্রাহিম খলিলের ঘটনা একটি পৃথক ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে লুকিয়ে থাকা এক বৃহত্তর সমস্যার প্রতিচ্ছবি।
যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে এ ধরনের ভয়াবহতা বারবার ফিরে আসবে এবং নিরপরাধ শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেবে।
