যশোরের মনিরামপুরে ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা নাকি স্থানীয় শত্রুতার জের—তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের ত্রিমোহনী চত্বরে শনিবার রাতের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি নৃশংস অপরাধের চিত্রই নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার এক গভীর বাস্তবতাকেও সামনে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতার জটিল সমীকরণে জড়িয়ে থাকতে পারে।
নিহত আশরাফুল আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, যুবদল নেতার নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল হামলা চালায়।
যদিও যুবদল নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এতে স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে কিংবা আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্বের বিষয়টি সরাসরি এড়ানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায়ই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।
আহত শাহীন তারেক দাবি করেছেন, এটি পরিকল্পিত হামলা। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এখনও সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে,
এটি কি কেবল পূর্ব শত্রুতার জের, নাকি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার একটি সুনির্দিষ্ট অপারেশন?
ঘটনাস্থলে প্রকাশ্যে হামলার ধরণ দেখে অনুমান করা যায়, এটি ছিল সংগঠিত ও লক্ষ্যভিত্তিক।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে সহিংসতা নতুন কিছু নয়।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন হামলার মাত্রা বেড়ে চলেছে।
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কিত করে, এবং রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে দেয়।
যশোর পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।
তবে অতীতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা পড়ে যায় বা দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হয়।
এ ধরনের ঘটনায় দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তই জনআস্থার একমাত্র ভরসা।
গ্রাম-শহর মিলিয়ে এখনো সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত—এটি কি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, নাকি কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ?
তবে ঘটনাটি স্পষ্ট করেছে যে, রাজনৈতিক পরিচয়ই যখন কারও জীবনসংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন গণতন্ত্রের শেকড় দুর্বল হয়।
যশোরে আশরাফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড কেবল একটি মানুষের মৃত্যু নয়—এটি রাজনৈতিক সহিংসতার একটি দৃষ্টান্ত, যা স্থানীয় পর্যায়ের শাসন ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু বিচার নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতিরও আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
