চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ডের নামে ইউনূস সরকারের প্রচারণা আসলে এক প্রহসন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সরকারি ডাটা বলছে—প্রচারিত সংখ্যাটি বাস্তব নয়। বিশ্লেষণে বেরিয়ে এলো শুভঙ্করের ফাঁকি।
চট্টগ্রাম বন্দরে একদিনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের নতুন রেকর্ড গড়ার নামে এক প্রচারণা অন্তর্জাল ও গণমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংবাদটি এমনভাবে পরিবেশিত হয়েছে যেন এটি অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকারের এক অনন্য অর্জন। কিন্তু পরিসংখ্যান ও তথ্য খতিয়ে দেখলে ছবিটি ভিন্ন। প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি সত্যিই নতুন কোনো রেকর্ড, নাকি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য সাজানো এক পরিসংখ্যানগত কৌশল?
২৯শে আগস্ট সিডিডিএল (চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড) দাবি করে যে, তারা এনসিটি (নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল)-তে একদিনে সর্বোচ্চ ৫,০১৯ কন্টেইনার ওঠানামার কাজ সম্পন্ন করেছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজ পয়েন্ট, ডেলিভারি পয়েন্ট এবং গেট ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা আনার ফলেই এ সাফল্য এসেছে।
এই দাবি সংবাদ সম্মেলনে প্রচারিত হওয়ার পরপরই সরকারের প্রেস উইং সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে তা প্রচার করে।

অদ্ভুত বিষয় হলো, সংবাদটিতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি—এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে একদিনে সর্বোচ্চ কত কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছিল।
অর্থাৎ ‘রেকর্ড ভাঙা’ কথাটি প্রচার করা হলেও পূর্বেকার সংখ্যাটি ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত সরকারি ডাটা বলছে, ২৮শে আগস্ট আমদানি ও রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪,২৪৪ টিইউস (TEUs)।
কিন্তু সিডিডিএল দাবি করছে সংখ্যা ৫,০১৯ টিইউস।
প্রশ্ন হলো, অতিরিক্ত এই ৭৭৫ কন্টেইনার কোথা থেকে এল?
এখানেই আসল চাতুরিটা।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এবং বন্দরের নিজস্ব কম্পিউটার সিস্টেম অনুযায়ী দৈনিক হিসাব চলে রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে শুরু হয়ে পরের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত।
অথচ ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ হিসাব করেছে সকাল ৮টা থেকে পরের দিনের সকাল ৮টা পর্যন্ত।
অর্থাৎ রাতের কম উৎপাদন ও দিনের বেশি উৎপাদন মিলিয়ে তারা এক ধরনের ‘মিশ্র হিসাব’ করেছে।
ফলে দুদিনের কার্যক্রমকে একদিনের বলে প্রচার করে কৃত্রিমভাবে রেকর্ড গড়ার ভান সৃষ্টি করা হয়েছে।
এখানে বড় প্রশ্ন—চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন নিশ্চুপ?
অভিজ্ঞ মহল মনে করে, তারা ডাটার এই জালিয়াতি টের পেয়েছে বলেই এ বিষয়ে মুখ খুলছে না।
কারণ প্রকৃত রেকর্ড হলে অবশ্যই বন্দর কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে তা নিজেরাই ঘোষণা দিত।
অতীতে একাধিকবার এমন নজির রয়েছে।
ইউনূস সরকারের প্রেস উইং এই তথাকথিত রেকর্ডকে সাফল্য হিসেবে প্রচার করছে।
কিন্তু এটি আসলে কোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ‘রেকর্ড’ নয়।
বরং তথ্য বিকৃত করে জনগণের সামনে সাফল্যের ভান তৈরি করা।
যা শেষ পর্যন্ত সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্রের তথ্য বিকৃত করে প্রচারণা চালানো কোনো সরকারের জন্যই শুভকর নয়।
জনগণ স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান দেখতে চায়, ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ নয়।
