 
                  মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও রাশিয়ার মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আলোচনার অগ্রগতি। রাশিয়ার সমর্থনে জান্তা সরকারের শক্তি বাড়ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ।
বিস্তারিত রিপোর্ট:
ঢাকা, ২৯ মে ২০২৫:
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও গভীর করছে। বুধবার (২৮ মে) দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কো কো কিয়াও রাজধানী নেপিডোতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ইস্কান্দার আজিজভের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আলোচনায় উঠে আসে রাশিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, বিশেষত তানিনথারি অঞ্চলের দাউই গভীর সমুদ্রবন্দর এবং একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়।
রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা ও সামরিক সমর্থন
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মস্কো হয়ে উঠেছে মিয়ানমার জান্তার অন্যতম প্রধান মিত্র। রাশিয়া শুধু জান্তা সরকারকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে রক্ষা করছে না, বরং সরবরাহ করছে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র।
এর মধ্যে রয়েছে:
- MiG-29 জেট ফাইটার
- Mi-35 হেলিকপ্টার
- Pantsir-S1 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
এই অস্ত্রগুলো জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত প্রতিরোধ বাহিনীর ওপর ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পারমাণবিক ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতি
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও মিয়ানমার পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে একটি চুক্তি করে।
এর অংশ হিসেবে ইয়াঙ্গুনে খোলা হয় পারমাণবিক তথ্যকেন্দ্র। এর পাশাপাশি:
- ২০২৫ সালের মে মাসে স্বাক্ষরিত এক নতুন চুক্তি অনুযায়ী দাউই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেল শোধনাগার ও গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
- ২০২৩ সালে ৮.৩৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করে, যা ২০২৪ সালে মিয়ানমারের ৯০% জ্বালানি চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।
আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে ‘সুরক্ষা’ চুক্তি
২০২৫ সালের মে মাসেই মিয়ানমার ও রাশিয়া এমন এক চুক্তি করে, যা দুই দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারিক ক্ষমতা থেকে সুরক্ষা দেয়।
এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ রোধে একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার এই ভূমিকা শুধু মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে না, বরং এটি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সহায়তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা মিয়ানমার জান্তা সরকারের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।
তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, এই জোটবদ্ধতা শুধু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটকেই নয়, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তাকেও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে রোহিঙ্গা সংকট, গৃহযুদ্ধ ও মানবিক দুর্যোগ আরও জটিল হতে পারে।

 
                         
         
         
        