রাজশাহীর পুঠিয়ায় হিন্দুদের জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগে আহত ৫। বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল, ভয়ভীতি ও অস্ত্র ব্যবহারসহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ জানতে পড়ুন বিস্তারিত।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের গোড়াগাছি হিন্দুপাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জমি দখল ও পুকুর খননের ঘটনা ফের সংবেদনশীল আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির পরিবেশ বিষয়ক এক সাবেক নেতা গভীর রাতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে খননকাজ শুরু করলে তা বাধা দিতে গিয়ে সংঘর্ষ ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন কমপক্ষে পাঁচজন।
ঘটনার মূল অভিযুক্ত আবুল কালাম, যিনি দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এবং বর্তমানে নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ও তার অনুসারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকদের জমি ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল করে সেখানে পুকুর খননের চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, আবুল কালাম প্রথমে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সনজীব ডাক্তারের নামে জমির ডিড করান, পরে তা নিজের নামে ১০ বছরের লিজ নেন। তবে লিজের নামে প্রকৃতপক্ষে জোরপূর্বক ২০ বিঘারও বেশি জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর দাবি, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গভীর রাতে এই খনন কার্যক্রম চালানো হয়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
সাধারণ জনগণের বক্তব্য স্পষ্ট — “জমি নিয়ে রাজনীতি নয়, আইনের শাসন চাই।” কে কোন দল করে সেটি বড় কথা নয়, বরং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও জমি দখলের মতো আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে বরদাশত করা উচিত নয়।
পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে এক্সক্যাভেটর নিয়ে খননকাজ শুরু হয়। এতে বাধা দিলে স্থানীয় কৃষকদের উপর হামলা চালানো হয়। পরে গ্রামবাসী সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ভেকু ভাঙচুর করে এবং বেশ কিছু দেশি অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ।
ঘটনার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর স্পষ্ট জানান, “পুঠিয়ায় কোনো পুকুর খননের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আবুল কালামের দাবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।” এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, এই খনন কাজ ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।
আবুল কালাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তিনি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেছেন এবং টাকা না দেওয়ায় তার ভেকু ভাঙচুর করা হয়। এই পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও এ ঘটনায় নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এই ঘটনা ফের স্পষ্ট করে দিচ্ছে, রাজনৈতিক ক্ষমতা হারালেও স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপি নেতারা এখনও কীভাবে ভয়ভীতি, সন্ত্রাস ও দখলের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনাকে শুধুমাত্র একটি আইন-শৃঙ্খলার ইস্যু হিসেবে দেখলে হবে না, এটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতা যদি ক্ষমতার বাইরে থেকেও সংখ্যালঘুদের জমি দখলে এগিয়ে আসে, তবে ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘু নিরাপত্তা ও জমির অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের অবস্থান কতটা দুর্বল হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
সরকারি অনুমতি ছাড়াই জমি দখল, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং দেশি অস্ত্রসহ খননকারীদের উপস্থিতি — সব মিলিয়ে এটি একটি চরম আইনবিরোধী ও রাজনৈতিকভাবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা যদি এ বিষয়ে নীরব থাকেন, তাহলে তা দলীয় দায় এড়ানোর প্রয়াস হিসেবেই গণ্য হবে।
এলাকাবাসীর স্পষ্ট দাবি, “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব নয়।” রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়।

 
                         
         
         
         
        