
চ্যাথাম হাউজে ড. ইউনূস বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও বাস্তবতা ভিন্ন। গত দশ মাসের পরিসংখ্যান বলছে গ্রেফতার, সেন্সরশিপ, এবং ভয়ভীতির মধ্যে কাজ করছেন সাংবাদিকরা।
কলাম লেখকঃ জি ইসলাম
সম্প্রতি লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর মতে, “বাংলাদেশে গণমাধ্যম এখন মুক্ত, এবং সাংবাদিকরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারছে।” কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কি সত্যিই তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটায়?
দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা এক ভয়াবহ ভিন্ন দৃশ্যপট উপস্থাপন করে। গত দশ মাসে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক নিপীড়নের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে, যা ইউনূসের ‘সন্তোষজনক’ মন্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
🔍 বাস্তব চিত্র ও পরিসংখ্যান
✅ সাংবাদিক গ্রেফতার:
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত সময়কালে কমপক্ষে ৮৪ জন সাংবাদিক বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক।
✅ মিডিয়া হাউজে হামলা ও বন্ধ:
বহু অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিশেষ করে প্রগতিশীল ও সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশে পরিচিত পোর্টালগুলোর ওপর আইটি বিভাগের চাপ, ব্লক, এমনকি সরাসরি অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে।
✅ সেন্সরশিপ ও স্বতঃস্ফূর্ত আত্মসংযম:
প্রতিষ্ঠানিক নির্দেশনা এবং “অভ্যন্তরীণ নজরদারির” কারণে বহু সম্পাদক ও রিপোর্টার ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে’ অনেক রাজনৈতিক বিষয় এড়িয়ে চলছেন।
✅ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ:
২০২৫ সালের “Reporters Without Borders”-এর প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৩তম স্থানে রয়েছে, যা গত এক দশকে সর্বনিম্ন।
🛑 প্রশ্ন উঠছে: কাদের জন্য এই “স্বাধীনতা”?
যেখানে সাংবাদিকরা প্রতিবেদন করার আগে ৩ বার আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন, যেখানে সংবাদ প্রকাশের ১০ মিনিটের মধ্যে ফোন যাচ্ছে সম্পাদকদের কাছে, সেখানে কিসের স্বাধীনতা?
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, ড. ইউনূসের সরকার কৌশলে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে তথ্যমাধ্যমের ওপর। অপপ্রচার, আংশিক তথ্য প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে পরিচালিত “ভুয়া অনলাইন চ্যানেল” তৈরি করে জনমত বিভ্রান্ত করার পরিকল্পনা দৃশ্যমান।
ড. ইউনূসের বক্তব্য কূটনৈতিকভাবে সাবলীল হলেও বাস্তবতা ভয়ঙ্করভাবে ভিন্ন। সংবাদমাধ্যম আজ আর জনগণের নয়, বরং শাসকগোষ্ঠীর মুখপাত্রে পরিণত হতে বসেছে। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের সত্যিকারের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন গণচাপ, সাংবাদিক ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের জোরালো ভূমিকা।
