জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের ‘লং মার্চ’ কর্মসূচিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি ও পুলিশের অবস্থান বিশ্লেষণ করছে এই প্রতিবেদন।

আজ ১৫ জুন ২০২৫, রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্র সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকে ঘটে গেল এক উত্তপ্ত দৃশ্যপট। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারী কয়েকশত আন্দোলনকারী সচিবালয়ের উদ্দেশ্যে ‘লংমার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছয়টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় সকাল থেকেই, যখন নিবন্ধনধারী শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে দাবিপত্র ঘোষণা করেন।
মূল দাবি—১৭তম ব্যাচের আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, চলমান ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি স্থগিত রাখা এবং আপিল বিভাগের রায় অনুসারে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষকরা সচিবালয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলে, প্রেস ক্লাব মোড় থেকে লিংক রোড পর্যন্ত তাদের গতি থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম জানান, তারা আন্দোলনকারীদের বারবার সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় থাকেন এবং ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য হয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, “আমরা ওনাদের পাঁচজনকে সচিবালয়ে পাঠিয়েছিলাম যেন তারা দফতরে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজেন। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় তারা ফিরে এসে জানান—তাদের একমাত্র পথ আন্দোলন।”
ঘটনার সময় পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন আন্দোলনকারী এবং পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন। প্রেস ক্লাব এলাকা ও সচিবালয় চত্বরজুড়ে বাড়ানো হয় পুলিশি উপস্থিতি, মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।
১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের দাবির পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, প্রশাসনিক জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার অভিযোগ। অনেকেই বলছেন, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার সমন্বয়হীনতার ফলে শিক্ষকদের এই অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ না দেওয়া, প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা এবং ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষোভের সূত্রপাত
একজন আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা আদালতের রায়ে জয়ী হয়েছি, তবুও সরকার চুপ কেন? আমরা কি এই রাষ্ট্রে শিক্ষক হিসেবে ন্যায্য সম্মান পাব না?”
ঘটনাটি শুধু শিক্ষকদের একটি নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা নয়, এটি বাংলাদেশের প্রান্তিক পেশাজীবীদের ন্যায়বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা এবং প্রশাসনের সহনশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
যেখানে আদালতের রায় আছে, সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ও সাউন্ড গ্রেনেড—রাষ্ট্র কি নিজেরই রায়কে অমান্য করছে?অন্যদিকে পুলিশের বক্তব্য স্পষ্ট—প্রশাসনিক নিরাপত্তা এবং ১৪৪ ধারার প্রয়োগ রক্ষা করতেই তারা বাধ্য হয়েছেন শক্তি প্রয়োগ করতে।
১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের এই আন্দোলন আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। যদি দ্রুত প্রশাসনিক সমাধান না আসে, তবে শিক্ষক সমাজের মধ্যে চরম হতাশা এবং অসন্তোষ সৃষ্টির পাশাপাশি রাষ্ট্রের শিক্ষানীতিতেও এর নেতিবাচক প্রতিফলন দেখা যাবে।
একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—রায়ে জয়ী হয়ে রাস্তায় লাঠি, গ্রেনেড, ব্যারিকেড—এটাই কি আজকের বাংলাদেশে শিক্ষকের মর্যাদা?
