সাবেক সিআইএ প্রধান লিওন প্যানেটা সতর্ক করেছেন, ইরানে হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়াবে। বিশ্লেষণ করলেন এই মন্তব্যের গুরুত্ব, ইতিহাস ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ।
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের উপর সরাসরি আঘাত হানে, তাহলে তা কেবল একটি সামরিক অভিযানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং মধ্যপ্রাচ্যকে টেনে নিয়ে যেতে পারে আরেকটি দীর্ঘ ও বিপজ্জনক যুদ্ধে। এমন সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক প্রধান এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা। সিএনএন-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া—বিশেষ করে ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের ‘ভয়ংকর ভুল’ থেকে।
প্যানেটার বক্তব্যে ইরাক যুদ্ধের প্রসঙ্গটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় এক দশকব্যাপী যুদ্ধ ও বিপুল পরিমাণ প্রাণহানি, আর্থিক ব্যয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ফেলেছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই সাবেক এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বর্তমান ইরান পরিস্থিতিতে একই ধরনের ভুলের আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ইরানে যদি হামলা চালানো হয়, তাহলে এটি নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি করবে।’ তাঁর মতে, ইরান পাল্টা আঘাত দিতে বাধ্য হবে এবং সেটি শুধু একটি আকাশ হামলায় সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং এটি একটি বিস্তৃত সামরিক সংঘাতের দিকে গড়াবে।
অভিজ্ঞতার ভরসা: লিওন প্যানেটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভ্যন্তরে বহু বছর কাজ করেছেন। তাঁর মূল্যায়ন একান্তই রাজনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত ও গোয়েন্দাভিত্তিক তথ্যনির্ভর।
বর্তমান প্রেক্ষাপট: মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা চরমে। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন, হুথি বিদ্রোহ, সিরিয়ায় মার্কিন ড্রোন অভিযান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর সক্রিয়তা—সব মিলে বিস্ফোরণ অনিবার্য মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন পরিস্থিতিতে ইরানকে টার্গেট করলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে।
প্যানেটার বক্তব্যের মাঝে একটি অনুজ্জ্বল হলেও স্পষ্ট বার্তা আছে—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ নয়, বরং কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা প্রশমনের পথ খোঁজা। সামরিক শক্তি প্রয়োগ কেবল নতুন শত্রু তৈরি করবে, যেমনটি হয়েছিল ইরাকে।
তবে কূটনীতি এখন আর অতটা সহজ নয়। ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি আরও কট্টরপন্থী হয়ে উঠেছে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইরান-বিরোধী চাপ বাড়ছে। তারপরও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ ভূমিকা ও সৌদি আরব, কাতার কিংবা ওমানে মধ্যস্থতার সুযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান—দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বাস্তবতা এবং সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে বলছে: এই মুহূর্তে একটি ভুল সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য ও সমগ্র বিশ্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
প্যানেটার সতর্কতা কেবল রাজনৈতিক বিবৃতি নয়; এটি ইতিহাসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে উঠে আসা এক অন্তর্দৃষ্টি। প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের উচিত এই বার্তা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া—কারণ সামান্য ভুলেই অপ্রতিরোধ্য সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে।
