ফরিদপুরে ইউনূস সরকারের সময়ে নির্মিত কোটি টাকার সড়ক হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটি উন্নয়নের নামে লুটপাটের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। প্রকৌশলী থেকে পথচারী—সবাই ক্ষুব্ধ।
“উন্নয়ন” আজ যেন এক ফাঁপা শব্দ—বড় বাজেট, ঘটা করে উদ্বোধন, আর তারপর ধসে পড়া বাস্তবতা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার ভেন্নাতলা-বেড়িরহাট সড়কের সাম্প্রতিক চিত্রটি যেন ইউনূস সরকারের ‘উন্নয়ন দর্শন’-এর প্রতিচ্ছবি। ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং, চাপ দিলেই ঝুরঝুর করে ভেঙে যাচ্ছে পিচ। জনগণের চোখে এটি শুধু রাস্তা নয়, দুর্নীতির একটি জীবন্ত দলিল।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বাহাদুর শাহের ক্ষোভ যেন গোটা এলাকার প্রতিধ্বনি—“আমরা ইউনূস সাহেবকে সৎ ভেবেছিলাম, তিনি তো নোবেলজয়ী! কিন্তু এই রাস্তা তো প্রতারণার চূড়ান্ত উদাহরণ।”
তিন হাজার সাতশো মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক সংস্কারে কাজের দায়িত্ব পায় 'মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ'। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)-এর অধীনে এই কাজ শুরুর সময় থেকেই বিটুমিনের নিম্নমান নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সে প্রশ্ন চাপা পড়ে গিয়েছিল ক্ষমতার প্রতাপে।
১৪ জুন মাত্র ১৫০ মিটার রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার একদিন পরই এক মোটরসাইকেল আরোহীর দুর্ঘটনার মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায় পুরো নাটক। কৌতূহলী জনগণ হাত দিয়ে টান দিতেই উঠে আসে কার্পেটিং। এরপর জনতা উত্তাল হয়ে ওঠে—সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার পক্ষকে অবরুদ্ধ করা হয়, কাজ বন্ধ করে দিতে হয়।
স্থানীয় যুবক মেহেদি হাসান বলেন, “এই রাস্তা উন্নয়ন না, এটা তো সোজাসুজি জনগণের সাথে প্রতারণা। কার্পেটিং বলতে কিছুই হয়নি। এটি যেন কাগজ দিয়ে ঢাকা একটি রাস্তা।”
এমন অভিযোগ শুধু জনতার নয়, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই কাজ দেখে মনে হচ্ছে বরাদ্দকৃত অর্থের এক চতুর্থাংশও ব্যয় হয়নি। পুরো টাকা লোপাট হয়েছে ঠিকাদার ও সরকারি লোকজনের যোগসাজশে।”
ভ্যানচালক সিরাজ বিশ্বাস বলেন, “আগের ভাঙা রাস্তা এই রাস্তাটার চেয়ে ভালো ছিল। নতুন রাস্তা একদিনেই উঠে যাচ্ছে—এটা কেমন কাজ?”
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, “কার্পেটিংয়ের বেশিরভাগ কাজ এখনো বাকি। কিন্তু যা হয়েছে, তাতেই মানুষ ক্ষেপে গেছে। আমরা চাই নতুন করে ভালোভাবে কাজ হোক।”
ঠিকাদার মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদ বলেন, “বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি।” উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম বলেন, “গুণগত মান ঠিক আছে বলে মনে করছি। তবে আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
কিন্তু প্রশ্ন হলো—দুই-একদিনের খতিয়ে দেখা কি ফিরিয়ে দিতে পারবে জনগণের আস্থা? উন্নয়ন মানে কি কেবল উদ্বোধনী ছবি, বাজেট বরাদ্দ আর কন্ট্রাক্ট বণ্টন?
ড. ইউনূস ও তার প্রশাসন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই উন্নয়ন কতটা টেকসই ও জনবান্ধব—তা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছেই। দুর্বল সড়ক, গায়েবি কাজ, এবং জনরোষ—সব মিলে বোঝা যাচ্ছে, কাগজে-কলমে উন্নয়ন যতটা জোরালো, বাস্তবে ততটাই দুর্বল।
স্থানীয় মানুষদের ভাষায়, এই উন্নয়ন যেন “মেকআপ”—চুলকানির ওষুধ না দিয়ে শুধু মুখে পাউডার লাগানোর মতোই!
