কুমিল্লার মুরাদনগরে মাদক চোরাকারবারির অভিযোগ তুলে এক মা ও তার দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে গ্রামবাসী। গণপিটুনির এই ঘটনা পরিকল্পিত হত্যা নাকি জনরোষের বহিঃপ্রকাশ? পড়ুন বিশ্লেষণ।
কুমিল্লার মুরাদনগরের বাঙ্গুরা বাজার থানার অন্তর্গত আকবপুর ইউনিয়নের কড়াইবাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে ঘটে গেলো এক বিভীষিকাময় ঘটনা। অভিযোগের ভিত্তিতে একই পরিবারের তিনজন—মা রোকসানা আক্তার রুবি, ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি—কে গ্রামবাসীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রুবির আরেক মেয়ে রুমা। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
বাঙ্গুরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, “নিহতরা মাদক চোরাকারবারে জড়িত ছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে গণপিটুনির কারণ হিসেবে এ তথ্য উঠে এসেছে।”
এই ঘটনা শুধু একটি মাদক সংশ্লিষ্ট সামাজিক প্রতিরোধ হিসেবে বিবেচনা করলে সেটি হবে একপেশে সিদ্ধান্ত। কারণ—
- মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে কখনোই আইন হাতে তুলে নেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
- পরিবারটির সদস্যদের বিরুদ্ধে পূর্বে পুলিশের কোনো লিখিত অভিযোগ ছিল কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
- নারীদেরও হত্যার শিকার হওয়া একটি গভীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো অপরাধের বিচার করতে পারে কেবলমাত্র আদালত। গণপিটুনি আইনবহির্ভূত এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ঘটনায় যারা অংশ নিয়েছে, তারা এক বা একাধিক হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশীদার।
সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে—
কারা ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী? নিহতদের প্রকৃত অপরাধের প্রমাণ কী ছিল? পুলিশ কীভাবে এত বড় একটি ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থ হলো?
রাষ্ট্র যদি প্রতিটি অপরাধকে নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ দেয় জনগণকে, তাহলে সমাজে বিচারবহির্ভূত প্রতিশোধ, গুজব এবং হিংসা-প্রবণতা বেড়ে যাবে।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল—
- অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্য অনুসন্ধান
- প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া
- গণপিটুনি প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অবশ্যই চলবে, তবে আইনের শাসনকে পাশ কাটিয়ে নয়। মুরাদনগরের এই ঘটনা আমাদের সামনে আবারও প্রশ্ন তুলেছে—
সমাজ কতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে? বিচারহীনতা কি মানুষকে হিংস্র করে তুলছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না খুঁজে শুধুমাত্র “মাদক চোরাকারবারি” বলে পরিবার ধ্বংসের এমন ঘটনার প্রশ্রয় দিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ংকর ও বিচারবহির্ভূত সমাজ গড়ে উঠবে।
