২০২৬ সালের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাজেট বরাদ্দ ৯৩% কমাচ্ছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অন্যতম বৈদেশিক আয়ের পথ কি এবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?
যখন বাংলাদেশে সামরিক প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্রে, ঠিক তখনই জাতিসংঘ থেকে এসেছে একটি ধাক্কাস্বরূপ ঘোষণা—২০২৬ সালের শান্তিরক্ষী মিশনের (CIPA) জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। একইসঙ্গে জাতিসংঘের বাইরের অন্যান্য মিশনের বাজেট $৪১১ মিলিয়ন থেকে কেটে মাত্র $৩০ মিলিয়নে নামিয়ে আনা হচ্ছে—অর্থাৎ প্রায় ৯৩% বাজেট কমানো হয়েছে।
কি বলছে বাজেট?
✅ ২০২5 সালের বাজেট (CIPA): $2.1 বিলিয়ন
❌ ২০২৬ সালের বাজেট (CIPA): $0
⚠️ জাতিসংঘ-আবদ্ধ নয় এমন মিশনগুলোর বাজেট: $411M → $30M
এটা যুক্তরাষ্ট্র সিনেট-এ প্রস্তাবিত এবং পরশুর মধ্যে পাস হতে যাচ্ছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। এই ঘোষণা কার্যকর হলে বাংলাদেশের মতো শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো দেশগুলোর জন্য এটি হবে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে তীব্র ধাক্কা।
বাংলাদেশের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশ এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণকারী রাষ্ট্র ছিল।
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য এই মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।
আয় ও কূটনৈতিক প্রাপ্তি:
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শান্তিরক্ষী মিশন থেকে আয় ছিল প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার
- সৈনিকদের বৈদেশিক অভিজ্ঞতা, আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার ও কূটনৈতিক যোগাযোগ তৈরির বড় মাধ্যম ছিল এই মিশন
এখন যদি এই পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে—
✖ সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক আয়ের উৎস হারাবে
✖ প্রশিক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চ সংকুচিত হয়ে যাবে
✖ কূটনৈতিক বলয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে ভারতের, পাকিস্তানের, আফ্রিকান গোষ্ঠীগুলোর সাথে
এখন কী করবেন?
প্রশ্ন উঠছে— বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এতকিছু করেও আন্তর্জাতিক মিত্রদের আস্থা হারিয়েছে কেন?
- অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন, সামরিক বাহিনীর অংশবিশেষের ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে
- জাতিসংঘও এখন শান্তিরক্ষা মিশনকে ফ্ল্যাট-আউট “অকার্যকর ও ব্যয়বহুল” আখ্যা দিয়ে এর পরিবর্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে চায়
ভবিষ্যৎ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন—
“এটা শুধুমাত্র বাজেট সংকোচনের ঘোষণা নয়, বরং শান্তিরক্ষার ধরন পাল্টে যাচ্ছে। আর যারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ বানিয়েছে, তাদের জন্য জায়গা সংকুচিত হচ্ছে।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাজেটের ৯৩% কাট ছাঁট এবং ২০২৬ সালে বরাদ্দ বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের জন্য সিগন্যাল লাল।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এখন দুই কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি:
- নিজেদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি কীভাবে ফিরিয়ে আনবে?
- বাহিনীর কাঠামো ও খরচ কীভাবে সামলাবে যখন বিদেশি মিশনগুলোর দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?
👉 এখন সময় এসেছে—অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানো এবং অরাজনৈতিক, পেশাদার বাহিনী গড়ে তোলা।
