শেখ হাসিনার সংগ্রাম কেবল এক রাজনীতিকের নয়, বরং একজন কন্যার পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছরের লড়াই, রাষ্ট্রযন্ত্রের ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এক মহীয়সী নারীর অসামান্য ইতিহাস।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক, নিষ্ঠুর এবং কলঙ্কিত অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা। সেই হত্যাকাণ্ডের সময় দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট জুড়ে ছিল না বিএনপি, ছিল না জাতীয় পার্টি কিংবা হেফাজত—ছিল কেবল জামায়াত ও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা।
যে নারীর পিতা, মা, ভাই, পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে—তিনি শেখ হাসিনা।
আজ, সেই নারীকে অনেকে ফ্যাসিস্ট বলার দুঃসাহস দেখায়!
অথচ সেই ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনাই ২১ বছর ধরে বিচার চেয়ে ঘুরেছেন এক দুয়ার থেকে আরেক দুয়ারে।
কেউ তাকে বিচার দেয়নি।
তাকে শুধু দেওয়া হয়েছে হত্যাচেষ্টা, ষড়যন্ত্র এবং অবজ্ঞা।
স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনৈতিক দল জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে অনুপ্রবেশ চালায়।
তারা কখনও জাসদের লুঙ্গির তলায়, কখনও ছাত্রলীগের ছায়ায় নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত হয়।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে তারা আবার হিংস্র হয়ে ওঠে।
সে সময় হেফাজতের ব্যানারে, নাগরিক কমিটির নামে তারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে।
এসব গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আবার পাকিস্তানি ভাবধারার একটি রাষ্ট্র কায়েম করা।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা তারই হাতে গড়া সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা, যারা ব্যক্তিগত ক্ষমতার মোহে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে।
জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও আমেরিকান সিআইএ-আইএসআই’র সমন্বয়ে একটি চরম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, যার চূড়ান্ত টার্গেট ছিলেন শেখ মুজিব।
ডেভিড ফ্রস্টকে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বিখ্যাত উত্তর—“I love my people too much”—এই অতিরিক্ত ভালোবাসাই যেন তার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল।
বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত রূপ নেয় খন্দকার মোশতাকের বাড়ি থেকে রান্না করে পাঠানো খাবারের মাধ্যমে, যা শেষবারের মতো বঙ্গবন্ধুর পরিবারের জন্য পরিবেশন করা হয়।
এরপর সেই সেনারা যাদের দায়িত্ব ছিল পাহারা দেওয়ার, তারাই হয়ে ওঠে হত্যাকারী।
১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখনো রাষ্ট্র ছিল খুনিদের দখলে।
পৈতৃক বাড়িতে প্রবেশের অধিকারও দেওয়া হয়নি।
বিমানবন্দরেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জিয়াউর রহমান, তবে লক্ষ মানুষের ঢলে তা ব্যর্থ হয়।
এরপর শুরু হয় দীর্ঘ এক লড়াই—ফুলের বিছানায় নয়, ছিল কাঁটায় ভরা রাস্তা।
বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যখন রাজনীতি করেছেন, তখন দেশের ভদ্র সমাজ তাকিয়ে থেকেছে নির্লজ্জ নির্লিপ্ততায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চাবিকাঠি ছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ—যা জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন হত্যাকারীদের বাঁচাতে।
শেখ হাসিনা সেই আইন বাতিল করে বিচার শুরুর পথ খুলে দেন ১৯৯৬ সালে।
অথচ তার আগেই খন্দকার মোশতাক শান্তির মৃত্যু বরণ করে, বিচার এড়িয়ে যায়।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধুর খুনিকে সংসদে এমপি বানান, দেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা।
যে কর্নেল রশিদ ১৫ আগস্ট রাতে শেখ রাসেলকে হত্যা করেছিল, তাকেও পুরস্কৃত করা হয়।
এভাবেই রাষ্ট্রীয়ভাবে শেখ হাসিনাকে অপমান ও অপদস্থ করার আয়োজন চলেছে একের পর এক।
যদি আপনার পরিবারের সকল সদস্যকে এক রাতে হত্যা করা হতো, তবে আপনি কি বিচার চাইতেন না?
শেখ হাসিনা কাউকে হত্যা করেননি, কিন্তু তাকেই বারবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে কেন?
তাকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা, তাকে বলা হয়েছে ফ্যাসিস্ট।
অথচ ইতিহাস বলে,
তিনিই সেই নারী যিনি খুনিদের বিচার করেছেন, বাংলাদেশের জন্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা ছিল এই ভূখণ্ডের নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতক।
আর যারা সেই হত্যার বিচার করতে চায়, তারা দেশপ্রেমিক।
শেখ হাসিনা আজ সেই লড়াইয়ের প্রতীক।
শিক্ষাবিদ ফজলুল করিম বলেছিলেন,
“ঈর্ষায় পীড়িত হয়ে ঈর্ষিতের স্থান দখল করা যায় না।”
ঠিক তাই, শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার স্থানে আজও কেউ আসতে পারেনি, পারবেও না।
কারণ তারা ইতিহাসের, হৃদয়ের, বিশ্বাসের এবং বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
