 
                  ২০০৪ সালের আগস্টে পাকিস্তানি জঙ্গি ইউসুফ ভাটের ‘বাংলাদেশ মিশন’ ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। কেন শেখ হাসিনা জঙ্গিদের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন, তার বিশ্লেষণ ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংযোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পড়ুন এখানে।
২০০৪ সালের আগস্ট। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা। লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সেই হামলার অন্যতম আন্তর্জাতিক চরিত্র ছিলেন পাকিস্তানি জঙ্গি ইউসুফ ভাট, যার স্বীকারোক্তি বাংলাদেশ ও আঞ্চলিক রাজনীতির অনেক অজানা অধ্যায় উন্মোচন করে। আজ আবার পাকিস্তান থেকে আগত সন্দেহভাজন মিশনারি কার্যকলাপের প্রসঙ্গ উঠে আসায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
ইউসুফ ভাট তার জবানবন্দিতে আটটি সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেছিলেন, যা এখনো বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক:
ভারত অস্থিতিশীল রাখা –
পাকিস্তানি গোয়েন্দারা মনে করত, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষাকারী শেখ হাসিনা তাদের কৌশলের বড় অন্তরায়।
ধর্মভিত্তিক জঙ্গিদের পছন্দের সরকার চাই তাদের, যা কখনোই আওয়ামী লীগ নয়।
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির শত্রু – শেখ হাসিনা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক।
জঙ্গিদের কাছে তিনি ইসলামপন্থীদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
বুদ্ধিজীবী ও মুক্তচিন্তার সমর্থন – শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা মানেই মুক্তচিন্তার পৃষ্ঠপোষকতা, যা ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের জন্য হুমকি।
আওয়ামী লীগকে ভাঙনের পথে ঠেলে দেওয়া – শেখ হাসিনা নিহত হলে আওয়ামী লীগ ভেঙে পড়বে—এটাই ছিল জঙ্গিদের বিশ্বাস।
ফলে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা সহজেই বাস্তবায়িত হবে।
পাকিস্তানের ‘চিরশত্রু’ শেখ হাসিনা – পাকিস্তানের মূলধারার রাজনৈতিক দল, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) এবং জঙ্গি সংগঠনগুলো শেখ হাসিনাকে বরাবরই শত্রু মনে করেছে।
বাংলাদেশি রাজনৈতিক জোটে জঙ্গি প্রভাব – দেশের কিছু ইসলামপন্থী ও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতার কারণেই জঙ্গিদের কার্যক্রম টিকে ছিল।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র – দেশের কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক গোষ্ঠীও শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করত, আর তাদের স্বার্থ জঙ্গিদের সঙ্গে মিলে যেত।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট – শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোরও প্রধান শত্রু ছিলেন শেখ হাসিনা।
২০০৪ সালের হামলার তদন্তে প্রকাশ পায়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং দেশীয় সহযোগী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো একই সূত্রে বাঁধা ছিল।
এর মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুধু বাংলাদেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি একটি আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।
২০২৫ সালে আবার পাকিস্তান থেকে আসা সন্দেহভাজন জঙ্গি এজেন্ট নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন ২০০৪ সালের ইতিহাস নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন জাগে—
শেখ হাসিনা এখনো কি জঙ্গিদের প্রধান শত্রু?
পাকিস্তান কি আবারও বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে?
দেশীয় কিছু রাজনৈতিক শক্তি কি বিদেশি এজেন্ডার সঙ্গে মিলে একই খেলায় নেমেছে?
২০০৪ সালের আগস্টের গ্রেনেড হামলা শুধু শেখ হাসিনার জীবনের ওপর আঘাত ছিল না; এটি ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।
আজকের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান থেকে আসা নতুন মিশন সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতারই অংশ কি না, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।
ইতিহাস যদি শিক্ষা না দেয়, তবে ইতিহাস নিজেই নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে।

 
                         
         
         
        