 
                  ‘বাংলাদেশে বিএসসি প্রকৌশল ও ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব নতুন মোড় নিয়েছে। চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সমাধানের জন্য সরকার গঠন করেছে ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ।
বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষার সংকট নিয়ে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো. ওয়ালি উল্লাহ জানান, সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখছেন।
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমাদের কমিটমেন্ট দেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তাই পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশের প্রকৌশল ক্যাম্পাসগুলোতে শাটডাউন চলবে।”
ডিপ্লোমা বনাম বিএসসি শিক্ষার্থীদের দ্বন্দ্ব
আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হলো সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি প্রকৌশলীদের মধ্যে সুযোগের বৈষম্য।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে পদ শুধুমাত্র ডিপ্লোমাধারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে, অথচ বিএসসি ডিগ্রিধারীদের সুযোগ দেওয়া হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়।
সরকারের পদক্ষেপ: ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ
দাবি পর্যালোচনার জন্য সরকার ইতিমধ্যে ১৪ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে, যার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম।
এর আগে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে একটি ছোট কমিটি করা হলেও সংকট সমাধান না হওয়ায় এখন বড় আকারে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সমস্যা দীর্ঘদিনের এবং জটিল। তাই সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান বের করতে হবে।
কমিটিকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
তাদের অভিযোগ, সরকারের দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণেই এই আন্দোলন ঘনীভূত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে তারা দাবি করে, যৌক্তিক সমাধানের বদলে দমননীতির আশ্রয় নেওয়া হলে আন্দোলন আরও বিস্ফোরিত হবে।
বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের বৈষম্যের শিকার। ডিপ্লোমা ও বিএসসি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক অবস্থান ও পেশাগত মর্যাদাতেও প্রভাব ফেলছে।
এই সংকট সমাধানে সরকারের গঠন করা ওয়ার্কিং গ্রুপ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে বাস্তবায়নের গতি ও আন্তরিকতাই এখানে মূল চ্যালেঞ্জ।
যদি দ্রুত সমাধান না আসে, তাহলে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ দেশের শিক্ষা খাতে বড় ধরনের স্থবিরতা তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের সংকট সমাধানে কেবল প্রশাসনিক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়—
বরং শিক্ষানীতি ও কর্মসংস্থানে বৈষম্য দূর করতে সমন্বিত কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।

 
                         
         
         
         
        