জামালপুরের মাদারগঞ্জে যুবদলের নেতাদের বিরুদ্ধে দোকান দখল ও ওএমএস চাল মজুদের অভিযোগে গ্রেপ্তার। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্লেষণ।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি দোকান দখলের ঘটনা শুধু একটি সাধারণ ফৌজদারি অপরাধ নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের বহিঃপ্রকাশ। যেখানে রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে আইন, অধিকার এবং সম্পত্তির উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
মাদারগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিনসহ তিনজন যুবদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০২১ সালে বৈধভাবে কেনা একটি মুদি দোকান জোরপূর্বক দখলে নিয়ে তা গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। স্থানীয় সালিশ ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। শেষ পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভয়াবহ প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে—দলীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত লাভ তোলা। মাদারগঞ্জের ঘটনাটি তারই একটি ক্ষুদ্র প্রতিফলন।
যুবদল একটি রাজনৈতিক সংগঠন হলেও, তাদের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে নানা অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ উঠে আসছে। হেলাল উদ্দিন ও তার সঙ্গীরা সরকারি ওএমএস চাল মজুদের নামে দোকান দখল করে রাখে, যা শুধু সম্পত্তি দখলের অভিযোগ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় খাদ্য কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতোও অপরাধ।
এখানে প্রশ্ন উঠছে—স্থানীয় ও জেলা যুবদল এবং বিএনপির ভূমিকা কী ছিল? স্থানীয় যুবদল নেতা বলেছেন, বিষয়টি জেলা নেতাদের জানানো হবে। জেলা যুবদল আহ্বায়ক ফোন ধরেননি। উপজেলা বিএনপি সভাপতি কেবল “তথ্য যাচাই” করার কথা বলেছেন।
এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিই আসলে অপরাধীদের উৎসাহ দেয়। যদি সংগঠন নিজেই নিজের কর্মীদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরত্ব তৈরি না করে, তাহলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনআস্থা আরও দুর্বল হবে।
প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে এমন আইনানুগ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং দ্রুত মামলা গ্রহণ জনগণের মাঝে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে যে, দলীয় পরিচয় আর রক্ষাকবচ নয়।এধরনের ঘটনা শুধু দোকান মালিকের ক্ষতিই করে না, বরং সমগ্র সমাজে ভয় ও অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করে। মানুষ যদি জানে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কেউ যখন তখন সম্পত্তি দখল করে নিতে পারে, তখন আইনের শাসন সম্পর্কে তাদের ধারণা একেবারে ভেঙে পড়ে।
মাদারগঞ্জের দোকান দখলের ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করলো যে, রাজনীতির শুদ্ধচর্চা না থাকলে তা সমাজে দুর্বৃত্তায়নের আখড়া হয়ে ওঠে। এখন সময়, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ নিজ সংগঠনের আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটার। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই আরও কঠোর হতে হবে, যার দায় রাজনীতির কাঁধে বর্তাবে।

 
                         
         
         
        