 
                  ময়মনসিংহে জিলা স্কুল মোড়ে ব্যবসায়ী মোসা খন্দকারের বাসায় দুর্বৃত্তদের ভয়ঙ্কর হামলা ও লুটপাট। নগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উদ্বেগ ও নাগরিক শঙ্কা বাড়াচ্ছে এই ঘটনা। পড়ুন বিশ্লেষণ।
গতকাল রাতের নীরবতা চিরে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে ঘটে গেল এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। নগরের জিলা স্কুল মোড়ের এক পরিচিত ব্যবসায়ী, মোসা খন্দকার, নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে ভয়ঙ্করভাবে লুটপাটের শিকার হয়েছেন। হাত, পা, চোখ ও মুখ বেঁধে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়, আর একইসাথে ২৩ লাখ নগদ টাকা ও দেড় ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তের দল।
এই ঘটনাটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং তা নগরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই নগ্নভাবে তুলে ধরেছে। যেখানে শহরের প্রাণকেন্দ্রেই এমন নির্লজ্জ ও সহিংস ডাকাতি ঘটে, সেখানে অন্যান্য বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক নয়।
ঘটনার বর্ণনায় উঠে এসেছে পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অপরাধের ছাপ। ব্যবসায়ী মোসা খন্দকার জানান, রাত ১২টার দিকে বাসায় প্রবেশের মুহূর্তে পেছন দিক থেকে দুজন ব্যক্তি তাকে আক্রমণ করে। তাদের মুখে ছিল চরম হুমকি: “চিল্লাইলে চাক্কু ঢুকাইয়া দিবাম।”
এ ধরনের ভাষা ও আচরণ স্থানীয় অপরাধ চক্রের ‘গ্যাং কালচার’ এর ইঙ্গিত দেয়। তারা কেবল লুট করতে আসেনি, মানসিক ও শারীরিকভাবে আতঙ্ক ছড়ানো ছিল তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এমন ‘টার্গেটেড হোম ইনভেইশন’ সাধারণত পূর্বপরিকল্পিত হয়, এবং সন্দেহ জাগে যে স্থানীয় কেউ না কেউ এই অপারেশনে তথ্যদাতা হিসেবে যুক্ত থাকতে পারে।প্রশ্ন উঠছে—নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল কীভাবে? কেন কোনো পর্যাপ্ত পুলিশি টহল বা নজরদারি ছিল না?
বাসিন্দারা দাবি করছেন, গত কয়েক মাস ধরে নগরে ছিনতাই ও চুরি বেড়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ঘটনার পর কোতোয়ালি মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, এসব তদন্ত দীর্ঘসূত্রতায় হারিয়ে যায় এবং অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে । ঘটনায় উল্লেখ করা হয়, বাসার একটি ট্রাংকে দীর্ঘদিন ধরে ২৩ লাখ টাকা জমা করে রেখেছিলেন ভুক্তভোগী। এটি স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন তৈরি করে: নিজ বাসায় কেন অর্থ সম্পদ রাখা নিরাপদ নয়?
যেখানে ডিজিটাল ব্যাংকিং, অনলাইন ট্রান্সফার বা এফডিআর জাতীয় বিকল্প রয়েছে, সেখানে এত অর্থ হাতে রাখা হয়তো সন্দেহের উদ্রেক করতে পারে অপরাধীদের মাঝেও। ফলে শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নয়, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতাও অপরিহার্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, নগরে ‘নগদ অর্থ’ রাখা মানুষজনই এখন অপরাধীদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন।
প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। নইলে জনগণের আস্থা আরও ভাঙবে।
ময়মনসিংহে ব্যবসায়ীর বাসায় ঘটে যাওয়া লুটের এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের বিপর্যয় নয়, বরং গোটা নগরের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর এক বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্ন। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নাগরিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—এই তিনটি বিষয়ই এখন জরুরি।

 
                         
         
         
        