 
                  সিরাজগঞ্জের গরিব মুদি দোকানিকে ১৩ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিল রাষ্ট্র-এনজিওর অদৃশ্য লুটের চক্র। বিশ্লেষণ পড়ুন – কিভাবে ইউনুসের প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক গরিব মানুষের সর্বনাশ করছে।
সিরাজগঞ্জের এক গরিব মুদি দোকানির গলায় ছুরি ধরল যে সিস্টেম – তার নাম কী?
কেউ বলে ‘টেকনিক্যাল ভুল’।
কেউ বলে ‘সিস্টেমের ত্রুটি’।
কিন্তু ভেতরের চোখে তাকালে এটাকে আরেকটা নামেই ডাকা যায় – পরিকল্পিত শোষণ।
তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের মুদি দোকানি আব্দুল হাকিম বছরের পর বছর যে মিটার থেকে মাসে ২০০–৩০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল মেটাতেন, সেই মিটারই হঠাৎ এক মাসে তৈরি করল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৩ টাকার ভয়াবহ অঙ্ক। এই বিলের কাগজ যখন তার হাতে পৌঁছায়, তখন তার বুকের ভেতর কেমন এক হিম শীতল আতঙ্ক নেমে এসেছিল, তা কোনো সাংবাদিকের কলমে পুরোপুরি লেখা সম্ভব নয়।
কিন্তু এই ঘটনা শুধু আব্দুল হাকিমের ক্ষুদ্র জীবনের বিপর্যয় নয় – এ এক ভয়ানক ছায়ার ইঙ্গিত, যা আজকাল বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর তাড়াশ অফিস বলেছে, “মিলিয়ে দেখবেন, ভুল হয়ে থাকতে পারে।”
প্রশ্ন হলো, এই ‘ভুল’ হয় কীভাবে? মিটার রিডিংয়ের কোনো রেকর্ড যাচাই করা হয় না?
কার নির্দেশে এই বিল তৈরী হলো? আর এই বিল তৈরির জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি কে প্রতিষ্ঠা করেছে?
বড় কথা হলো – এই শোষণের নেটওয়ার্কটিকে কেবল কয়েকজন অসাধু বিদ্যুৎ কর্মকর্তা দিয়ে বোঝা যাবে না।
বছরের পর বছর বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো, মাইক্রোক্রেডিট ও দরিদ্র সহায়তার নামে যে অ-সরকারি সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছে – তার কেন্দ্রে আছেন একটাই নাম – মুহাম্মদ ইউনুস।
এক সময় “দরিদ্রের বন্ধু” হিসেবে পরিচিত এই গ্রামীণ ব্যাংকের স্রষ্টা এখন এমন এক পর্দার আড়াল থেকে দেশ শাসনের খেলায় নেমেছেন, যেখানে “সহযোগিতা”র নামেই রাষ্ট্রীয় সেবা বাণিজ্যিক লুণ্ঠনের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
এখন কেউ বলবে – “এই বিলের সঙ্গে ইউনুসের কী সম্পর্ক?”
উত্তরটা সহজ। 
গ্রামীণ ব্যাংক বা ইউনুসের মাইক্রোফাইন্যান্স নেটওয়ার্ক সরাসরি দেশের গ্রামের মানুষের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাপন কাঠামোর অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এনজিও-ঠিকাদার-উপদেষ্টা গোষ্ঠীই ‘স্মার্ট’ প্রজেক্ট, ই-রিডিং, ডিজিটাল বিলিংয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।
বিদ্যুৎ মিটার ‘ভুল’ আর পানি বিলের ‘ত্রুটি’ – এগুলো আসলে একই লুটের চেইনের ভিন্ন রূপ।
এমনকি এই লুটের সিস্টেমের আড়ালে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার এক ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়া কাজ করছে।
যেটা আমরা জুলাই দাঙ্গার পর রাষ্ট্রীয় অচলাবস্থার সময়ে নিজের চোখে দেখেছি।
এই ঘটনার পরে হয়তো সেই বিল বাতিল হবে।
হয়তো পত্রিকায় ক্ষমা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি বের হবে।
কিন্তু যে প্রশ্ন আজ কোটি কোটি মানুষের, তার উত্তর কে দেবে?
প্রশ্নটা সহজ – এই দেশে গরিব মানুষের ঘর, জমি, জীবনের নিশ্চয়তা কেড়ে নেয়ার এই রাজনীতি কবে শেষ হবে?
কবে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেবাখাতে এই হায়েনাদের বেপরোয়া হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে?
এবং সবচেয়ে বড় কথা – ইউনুসের মতো ‘রক্তচোষা’ অ-সরকারি সম্রাটদের প্রতারণার মুখোশ কে খুলবে?
১৩ লাখ টাকার বিল তাই আর কেবল একটি কাগজ নয় –
এটি আজকের বাংলাদেশের এক আর্তনাদ।
যেখানে নাগরিকের কণ্ঠ নিস্তেজ, আর ক্ষমতাবানের থাবা অদৃশ্য কিন্তু সর্বগ্রাসী।

 
                         
         
         
         
        