 
                  মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত বিমান নিয়ে আইএসপিআর যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বললেও পাইলটের মে-ডে কল বা সতর্ক সংকেত ছিল না। এ কি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা? বিশ্লেষণে উঠে আসছে জঙ্গী সংযোগ ও সম্ভাব্য রাজনীতিক উদ্দেশ্য।
গত ২১ জুলাই ঢাকার উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ছাদে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানায়—যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়েছিল। এই বিবৃতি দেওয়া হয় দুর্ঘটনার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে, অথচ—সর্বশেষ ফ্লাইট রেকর্ডিং, পাইলটের মে-ডে কল, বা কোনো ধরনের বিপদ সংকেতের তথ্য তখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
পাইলট কোনো ‘মে-ডে’ কল করেননি, বা রেডিও মারফত ত্রুটির কথা জানাননি—এমন তথ্য বিভিন্ন বিমান চলাচল প্রযুক্তিবিদ ও সূত্র নির্ভর পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
প্রশ্ন হলো—
তাহলে আইএসপিআর কিভাবে আগাম জানল এটি ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’?
এই পটভূমিতে বিশ্লেষণ প্রয়োজন—ঘটনাটি আসলে অপ্রত্যাশিত যান্ত্রিক ব্যর্থতা, বৈমানিক ত্রুটি, না কি পরিকল্পিত নাশকতা?
একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়াই যদি “যান্ত্রিক ত্রুটি” উল্লেখ করা হয়, সেটি স্বচ্ছতা ও তথ্যনির্ভরতার প্রশ্ন তোলে।
সামরিক উড্ডয়ন ব্যবস্থায়, বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে সাধারণত সময় লাগে ৭২ ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ, যেখানে ব্ল্যাকবক্স, ATC (Air Traffic Control) তথ্য, পাইলটের রেডিও বার্তা ও প্রযুক্তিগত লগ বিশ্লেষণ করা হয়।
কিন্তু বর্তমান ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই এই সরলীকৃত ব্যাখ্যা সন্দেহজনকভাবে দ্রুত।
ফ্লাইট ট্রাজেক্টরি ও দুর্ঘটনার ভিডিও বিশ্লেষণ বলছে,
বিমানটি হঠাৎ করে তীব্র ব্যাঙ্কিং অ্যাঙ্গেলে প্রবেশ করে, যা স্টল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং এটি দ্রুত উচ্চতা হারিয়ে ফেলে।
এটি সাধারণত হয় তিনটি কারণে:
প্রকৃত যান্ত্রিক ত্রুটি – যেমন ফ্ল্যাপ, ইঞ্জিন বা ফ্লাইট কন্ট্রোল ফেইলিউর।
নাশকতা বা স্যাবোটাজ – পূর্বনির্ধারিতভাবে বিমানে এমন উপাদান প্রতিস্থাপন করা যা উড্ডয়নের পর ব্যর্থ হয়।
মানবিক ত্রুটি – পাইলটের ভুল হিসাব বা পরিস্থিতিগত অসচেতনতা।
F-7BGi একটি ডেল্টা উইং সুপারসনিক যুদ্ধবিমান।
এ ধরনের বিমানের বৈশিষ্ট্য—কম গতিতে ও নিম্ন উচ্চতায় খুবই সংবেদনশীল, এবং সামান্য ভুলেই দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
তাই ট্রেনিং ঘাটতি বা অভিজ্ঞতার অভাবও হতে পারে সম্ভাব্য কারণ।
এই ঘটনার ঠিক পরপরই পলাতক সেনা কর্মকর্তা ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মেজর জিয়া একটি ‘গোপন রিপোর্ট’ ফাঁস করেন, যেখানে বিমানের পতনের পেছনে “সরকার ও বিমানবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতি”কে দায়ী করা হয়।
এই প্রচার কী নিছক রাজনৈতিক?
বিশ্লেষকরা বলছেন,
মেজর জিয়ার টাইমিং এবং তথাকথিত “ফাঁসকৃত তথ্য” মূলত মানসিক যুদ্ধের অংশ।
প্রশ্ন হচ্ছে—এই ধরনের প্রচারের পেছনে কী বিশেষ গোয়েন্দা বা আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয়?
তাদের উদ্দেশ্য কি জনগণের মনে সামরিক বাহিনীর প্রতি ঘৃণা তৈরি করে তা শুদ্ধিকরণের নামে জঙ্গি বা পাকিস্তানপন্থী মনোভাবসম্পন্ন অফিসারদের পুনঃস্থাপন?
বিশেষজ্ঞমহল বলছেন—এই দুর্ঘটনা যদি স্যাবোটাজ হয়ে থাকে, তাহলে এর সম্ভাব্য উদ্দেশ্য হতে পারে:
- ঘনবসতিতে বিমান বিধ্বস্ত করে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটানো।
- সরকার ও সামরিক বাহিনীর প্রতি জনমনে ক্ষোভ তৈরি।
- সেনা অভ্যুত্থানের ন্যারেটিভ তৈরি করে সুশৃঙ্খল বাহিনীকে বিতর্কিত করা।
- শূন্যতা তৈরি করে, জঙ্গি বা অনুগত গোষ্ঠীর অফিসার নিয়োগ সহজ করা।
তাহলে কি সত্যি “বিমানে নাশকতা” ছিল একটি বৃহৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ?
এই দুর্ঘটনাটি নিছক প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নাকি ভয়ংকর কোনো ষড়যন্ত্র—তা জানা এখনো বাকি।
কিন্তু যেভাবে তথ্য প্রচারে একপেশে ঘোষণা এসেছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন প্রধানের “তথ্য ফাঁস”—তাতে স্পষ্ট যে ঘটনাটি শুধু আকাশেই ঘটেনি, এর রাজনৈতিক মাত্রা মাটিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
তাই এই মুহূর্তে দরকার একটি স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত কমিটি গঠন, যা সামরিক-বেসামরিক উভয় মহলকে আস্থায় এনে বাস্তব কারণ উদঘাটন করতে পারবে।

 
                         
         
         
        