 
                  জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২-এ হামলা, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের কঠোর প্রতিবাদ।
১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করার দিন, জাতীয় শোক দিবস। এ দিবস শুধু আওয়ামী লীগ বা একটি রাজনৈতিক দলের শোক নয়—এটি সমগ্র জাতির ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি দিন। অথচ ২০২৫ সালের শোক দিবস ঘিরে ধানমন্ডি ৩২-এ যে হামলা, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটল, তা শুধু জাতির শোককে ম্লান করেনি, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার উপর নগ্ন আঘাত হেনেছে।
ধানমন্ডি ৩২ শুধু একটি ঠিকানা নয়—এটি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও জাতির আত্মত্যাগের প্রতীক।
এখানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন।
তাই এখানে শ্রদ্ধা জানানো মানে হলো শহীদদের স্মৃতিকে সম্মান জানানো।
অথচ সাধারণ মানুষ, শিল্পী, সাংবাদিক, শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ, অপমান এবং বাধা দেওয়ার ঘটনা ইতিহাসের জন্য এক অমার্জনীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ তাদের বিবৃতিতে একে শুধু রাজনৈতিক দমননীতি নয়, মানবাধিকারের ঘৃণ্য লঙ্ঘন বলেছে।
সাধারণ রিকশাশ্রমিক আজিজুলকে মিথ্যা মামলায় আটক, শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্থা, শহীদ পরিবারকে অসম্মান—এসব ঘটনা প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় দমনযন্ত্রের অপব্যবহার ঘটেছে।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—
একজন মাওলানাকে বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে বাধা দেওয়া। ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর এই আঘাত সাংবিধানিক অধিকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট নিয়ে রাজনীতি নতুন নয়। অতীতে বারবার দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষ জাতীয় শোক দিবসকে খাটো করার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু এবার যে মাত্রায় হামলা, মামলা, অপমান ও দমননীতি প্রয়োগ হলো, তা স্পষ্টতই ফ্যাসিবাদী প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
পরিষদের বিবৃতিতে যেসব দাবি উত্থাপিত হয়েছে তা নিছক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য:
- ধানমন্ডি ৩২-এ হামলার দায়ীদের শাস্তি।
- শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও শহীদ পরিবারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা।
- মিথ্যা মামলায় আটক সাধারণ মানুষের মুক্তি।
- শহীদ পরিবারের প্রতি অসম্মানের দায়ে কঠোর ব্যবস্থা।
- বাকস্বাধীনতা ও শোক প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ দৃঢ়ভাবে জানাতে চায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শহীদ পরিবারের প্রতি অবমাননা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
যারা এ ধরনের দমননীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অপমানের রাজনীতি চালাচ্ছে, তারা ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কিত হয়ে থাকবে।
আমরা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই—ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দমননীতি, হামলা-মামলা, গণগ্রেফতার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন।
স্বাধীনতার চেতনা ও শোক দিবসের মর্যাদা রক্ষায় সাংস্কৃতিক কর্মী, শ্রমজীবী মানুষ, শহীদ পরিবার ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জারি রাখুন
বিবৃতি প্রদানকারীদের নাম-
১৫ আগস্ট শুধু শোকের নয়, দায়িত্ববোধের দিন। এ দিনে জাতি তার ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরে।
কিন্তু যখন শোক দিবস ঘিরে দমননীতি চালানো হয়, তখন তা কেবল ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়—গোটা জাতির আত্মপরিচয় ও মর্যাদার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আজ তাই প্রশ্ন ওঠে— আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ চাই, নাকি দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাংলাদেশ?
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বান শুধু প্রতিবাদ নয়, বরং ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতার এক অনিবার্য ঘোষণা।

 
                         
         
         
        